জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অটিস্টিক শিশু ও তাদের অভিভাবকরা বাগেরহাট শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন। সবার মুখে আনন্দের ছাপ। দেখে বোঝার উপায় নেই, এদের মধ্যে কেউ কানে শোনে না, কেউ কথা বলতে পারেন না, আবার কারও স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি, কেউ আবার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, কেউ বা আবার ঠিকমত হাটতে পারেন না। সবাই এসেছেন জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ক্রীড়া উৎসবে অংশগ্রহণ করতে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান তারুন্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে অটিস্টিক শিশুদের অংশগ্রহণে এই ক্রীড়া উৎসবের উদ্বোধন করেন।
এসময় বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া অফিসার হুসাইন আহমাদ, জেলা শিশু কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, জেলা প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা শামীম আহসানসহ বিভিন্ন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পরেই শিশুরা মেতে ওঠে নাচ, গান ও বিভিন্ন খেলাধুলায়। সামাজিক আচরণে দুর্বল শিশুরা বাসকেট বল, ব্যাটমিন্টন, ফুটবল, বেলুন ফাটানো, ঝুড়ির মধ্যে বল ফেলা, চকলেট দৌড়সহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করেন। নাচ ও গান পরিবেশন করেন অনেক শিক্ষার্থীরা। ব্যতিক্রমী এই প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি পিছিয়ে পড়া শিশু ও তাদের অভিভাবকরা।
নুশরাত জাহান মীম নামের এক অটিস্টিক শিশুর মা মুসলিমা জাহান বলেন, একজন মা-ই জানে তার অসুস্থ শিশু থাকা কতটা কষ্টের। তারপরও সন্তানকে ভাল রাখতে চাই। অনেকদিন পরে আজকে ভাল একটি উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার মেয়েটা খুবই খুশি।
সজিব নামের এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু সজিব বলেন, এখানে এসে গান গাইলাম। অনেকদিন পরে অনেক মানুষ এক খেলাধুলা করলাম খুবই ভাল লাগল।
অটিস্টিক শিশুদের জন্য প্রতিনিয়ত এই ধরণের আয়োজন করতে পারলে, তাদের সমজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বাগেরহাট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বীপানিতা পাল।
তিনি বলেন, অটিস্টিক শিশুদের খেলাধুলা ও বাইরের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ খুবই কম। জেলা প্রশাসনের এই আয়োজনে অটিস্টিক শিশুরা খুবই উপকৃত হচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া অফিসার হুসাইন আহমাদ বলেন, জেলায় অনুষ্ঠিত ক্রীড়া উৎসবে যারা ভাল করবে তাদের ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে এবং প্যারা অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক অটিস্টিক আহমেদ কামরুল আহসান বলেন, নানা সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের এগিয়ে নিতে হবে। শিশুদের এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে পৃথিবী বদলে যাবে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে জানান জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
তারুন্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে অটিস্টিক শিশুদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ক্রীড়া উৎসবে জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি শিশুকে পুরষ্কার প্রদান করেন আয়োজকরা।
খুলনা গেজেট/এনএম